ঢাকা   শনিবার
৩০ নভেম্বর ২০২৪
১৬ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লাল চিনি উৎপাদনে ১শ’ কোটি টাকার বিক্রির আশা স্থানীয় কৃষকদের

ডেস্ক রিপোর্ট

প্রকাশিত: ১১:০৩, ৯ এপ্রিল ২০২৪

লাল চিনি উৎপাদনে ১শ’ কোটি টাকার বিক্রির আশা স্থানীয় কৃষকদের

ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া উপজেলায় প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ বছর ধরে কৃষকরা তাদের রোপন করা আখ মাড়িয়ে তা থেকে রস বের করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে হাতে হাতে তৈরি করছেন লাল চিনি। এবার দাম ভালো পাওয়ায় প্রায় ১০০ কোটি টাকার লাল চিনি বিক্রির আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।

চৈত্রের খড়ায় পুড়ছে যখন জমিন, সবুজ ফসলের মাঠ। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া আধমরা গাছটায় তখনও ফুটে আছে মুগ্ধতা নিয়ে আগুন ঝড়া পলাশ। দূরের সারি সারি তালগাছে ভরকরে যে জনপদ গন্তব্যে ছুটে গেছে তার নাম নাম পলাশতলী গ্রাম।

উপজেলার পলাশতলী গ্রামের নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া সুমাইয়া আক্তার। তার পিতা জামাল উদ্দিন এবার তার ১০ কাঠা জমিতে আখ চাষ করেছেন। বাবা-মা ছাড়াও পরিবারের অন্যান্যরা মিলে তৈরি করছেন হাতে তৈরি লাল চিনি। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে এই অঞ্চলে অন্তত প্রায় আড়াইশ থেকে ৩শ বছর ধরে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী লাল চিনি। উপজেলার বাকতা, কালাদহ, এনায়েতপুর এবং রঘুনাথপুর ইউনিয়নের প্রায় ২০ টি গ্রামের কৃষকরা তৈরি করেন এই চিনি। বংশ পরম্পরায় এখনও টিকে আছে দেশের শুধু নয় পৃথিবীর বিরল মিহি দানার ধুলার মতো এই লাল চিনির পরিচয়।

জামাল উদ্দিন বলেন, 'ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নে চাষাবাদ করা হয়। কিন্তু আখ চাষে নির্দিষ্ট মূল্য না পাওয়ায় চাষাবাদ কমে যাচ্ছে।'

চাষিরা বলেন, 'চিনির দাম একটু ভালো এই হিসেবে আমাদের চলতেছে। পরিবার নিয়ে সংসার চালাতে পারছি। দাম না পেলে বন্ধ করে দিতে হতে পারে।'

যুগ যুগ ধরে এইজনপদের মানুষের কাছে লাল চিনি বেঁচে আছে গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে। এবছর প্রতি মন ভালো মানের লাল চিনি ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। এবার দাম ভালো পাওয়ায় খুশি কৃষকরা। সরকার উন্নত আখের বীজসহ ঋণ সুবিধা দিলে এই অঞ্চলে আখ চাষ বাড়বে বলে মনে করেন কৃষকরা।

কৃষকরা বলেন, 'সরকার কিছু ঋণ দিলে তাহলে আখের আরও উন্নয়ন হতো।'

চিনি বিক্রেতারা বলেন, 'এবছর লাল চিনি ভালো বিক্রি হচ্ছে। আমরা চায় এই চিনি বিক্রি বাড়ুক।'

ফুলবাড়িয়া কৃষি বিভাগ বলছে এই উপজেলাতে এবছর ১০০ কোটি টাকার শুধু লাল চিনি বিক্রি করবে কৃষক। সেই সাথে ঐতিহ্যবাহী এই পণ্যকে জিআই পণ্য হিসেবে দেখতে চান তারা। যদিও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক জানিয়েছেন ইতোমধ্যেই লাল চিনিকে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্টমহলে কর্মপরিকল্পনা চলমান রয়েছে। এছাড়া কৃষকদের আখ চাষে আরও উদ্বুদ্ধ করতে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে কৃষি অফিস।

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মোঃ আবু রায়হান বলেন, 'কৃষক যেভাবে আখ চাষ করছে এবার আশা করছি লাল চিনি ১০০ কোটি টাকার উপরে বিক্রি হবে।'

ময়মনসিংহের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোছা: নাছরিন আক্তার বানু বলেন, 'আমরা চাচ্ছি যে এই লাল পণ্য জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাবে এবং কৃষকরা যেনো আখ চাষে আগ্রহী হয় সেদিকে পরামর্শ দিচ্ছি।'

দেশেজ চিনির উৎপাদন বাড়াতে আখ চাষ বাড়ানোর বিকল্প নেই। তবে লাল চিনির মতো ব্যাতিক্রমী এই পণ্যকে দেশের বাজারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে নিতে পারলে অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নতুন বার্তা যোগ হবার সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি অর্থনীতিবিদরা।

ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইদুর রহমান বলেন, 'লাল চিনি যদি আমরা আন্তর্জাতিক বাজারে নিয়ে যেতে পারি তাহলে এইটা দেশের অর্থনীতিতে বড় বার্তা দিবে এবং আমরা যে কর্মাশিয়াল কৃষির কথা বলি সেটাতে রূপ দেওয়া যাবে।'

জেলায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে আখের আবাদ হয়েছে ২৪ হাজার ৪৩ হেক্টর জমিতে। স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে লাল চিনি খাওয়ার পরামর্শও বিশেষজ্ঞদের। লাল চিনি সরাসরি আখ থেকে তৈরি ফলে তা অপরিশোধিত চিনি। লাল চিনিতে রয়েছে আখের সব উপাদান- শর্করা, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, উপকারী অ্যামাইনোঅ্যাসিড, জিঙ্ক, ফলিক অ্যাসিড শরীরের জন্য উপকারী বিভিন্ন উপাদান।